atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > জাতীয় > সীমান্তে খুনোখুনি স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে

সীমান্তে খুনোখুনি স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে

নিজস্ব প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ :

স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে অনেক। কিন্তু বিচার হয়নি একটি ঘটনারও। অনেকে আটক হয়েছেন, জেলে থেকেছেন। কিন্তু সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে তারা খালাস পেয়ে গেছেন। আবার অনেকে জেলখানায় থেকেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ভারতে স্বর্ণের চাহিদা অনেক বেশি। প্রতি বছর দেশটির ৯২ টন স্বর্ণের প্রয়োজন হয় অলঙ্কার তৈরিতে। এই স্বর্ণের ওপর ১৫ ভাগ আমদানি শুল্ক ও ৫ ভাগ সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। এই কারণে বৈধ পথে স্বর্ণ আনলে তাদের তেমন লাভ হয় না। এজন্য স্বর্ণ চোরাচালানের জন্য বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সীমান্ত বেছে নিয়েছে চোরাচালানকারীরা। ১৯৮৬ সাল থেকে এ সীমান্ত দিয়েই স্বর্ণ চোরাচালান হয়ে আসছে।

প্রতি বছর সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে স্বর্ণ পাচার হচ্ছে। পাচার হওয়ার রুট হিসেবে তিনটা এয়ারপোর্টও ব্যবহার হচ্ছে। এগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট। সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তাকে পছন্দের লোক হিসেবে বদলি করিয়ে নেয় স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট। সেখানে তাদের নিজস্ব লোক বসানো হয়। এয়ারপোর্টেও তাদের নিজস্ব লোক থাকে। দুই একটা চালান মাঝে মধ্যে ধরা পড়ে, তবে যা উদ্ধার হয় তা মহাসমুদ্রের মধ্যে এক ফোটা পানির মতো।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকাণ্ড ঘিরে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা, স্থানীয় প্রশাসনের বর্তমান কর্মরত এবং পূর্বে যারা এখানে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে স্বর্ণ চোরাচালান উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এখন পর্যন্ত এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উড়োজাহাজের ক্রু, বিমানবালা, বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্তরের কর্মী থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর বিভিন্ন স্তরের অনেক মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। সর্বশেষ দেশে স্বর্ণ চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে ভারতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ পাচারসহ চোরাচালান কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কয়েক বছর আগেও ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড তালিকায় নাম ছিল তার। প্রভাবশালীদের সংশ্লিষ্টতাই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানের বড় হাব করে তোলায় ভূমিকা রেখেছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সীমান্ত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এখন পর্যন্ত অনেক পাচারকারীকে ধরতে সক্ষম হলেও এর মূল হোতারা সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। মোটা দাগে কোটি কোটি টাকা বানানোর রুট দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকা। স্বর্ণ চোরাচালান, মাদক ও হুন্ডি-এই তিন ব্যবসা সেখানে চলছে অবাধে। এই অঞ্চলের অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এর সঙ্গে জড়িত। ৩৮ বছর চোরাচালানের ঘটনায় নিয়ন্ত্রণ ও লেনদেন নিয়ে অনেকে খুন হয়েছেন। সর্বশেষ খুন হয়েছেন এমপি আনার। এই খুনের ঘটনা বেশি আলোচনায় এসেছে তিনি ক্ষমতাসীন দলের এমপি হওয়ার কারণে। এর আগের খুন ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা এত আলোচনায় আসেনি। যেমন আসেনি সোহানুর রহমান সোহান (১৮) হত্যার ঘটনা। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে তার বাড়ি। ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল তাকে একটি চায়ের দোকান থেকে অস্ত্রের মুখে কয়েক জন তুলে নিয়ে যায়। পরে তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাড়াগোদা গ্রামে। তার দুই চোখ উপড়ানো ছিল।

ঐ সময় তার মা পারভীন বেগম বলেন, ‘আমি বিচার চাই না। কারণ এখানে হত্যাকাণ্ডের বিচার পাওয়া যায় না। সাক্ষী-প্রমাণ কেউ দিতে চায় না। কেউ দিলে তাকেও একইভাবে হত্যা করা হয়। আমার সন্তানকে হত্যা করেছে, কিন্তু ওর চোখ উপড়ালো কেন? যারা এই জঘন্য কাজ করেছে আল্লাহ তাদের বিচার করো।’

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তের উভয় দেশের মানুষ স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এই সিন্ডিকেটে এমপি আনারও ছিলেন। তার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল সিন্ডিকেটের টাকার লেনদেন। সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে সম্প্রতি একজন স্বর্ণ চোরাকারবারি সাত কেজি স্বর্ণ পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। পরে একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা সেই স্বর্ণে অর্ধেক জব্দ না দেখিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বহারা পার্টির সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেছিল মোহাম্মদ নাসিম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে। রেব প্রতিষ্ঠার পর থেকে রেবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় সেখানে শান্তি ফিরে আসে। তবে পরিস্থিতি শান্ত হলেও স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ হয়নি। এটিকে ঘিরে হত্যার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। বড় দুই দলেরই স্থানীয় নেতারা এর সঙ্গে জড়িত। দলের শীর্ষ নেতারা পর্যন্ত এই চোরাচালানের টাকার ভাগ পান। দুই দলের নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে কোনো বিরোধ নেই, বিরোধ হয় লেনদেন নিয়ে। যারা স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত, তারা ভাড়াটে খুনিদের পোষে। যারা এক সময় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সর্বহারা পার্টির সশস্ত্র সদস্য ছিল, তারাই এখন ভাড়াটে খুনি। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে এসব বিষয় বেরিয়ে এসেছে। তাদের মতে, এই অঞ্চলকে শান্ত রাখতে হলে অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

এমপি আনার হত্যার আসামি খুলনার অপরাধ জগতের সম্রাট খ্যাত শিমুল ভুঁইয়া এলাকাবাসীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। এখনো তার নামে ঐ অঞ্চলে চলে অন্ধকার দুনিয়ার সব কাজকারবার। তিনি স্বর্ণ চোরাচালান গডফাদারদের কিলার হিসেবে নিয়োজিত। তাদের কাছ থেকে অনেক টাকা পায় শিমুল। এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিমুল ছাড়াও তার পরিবারের আরও তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা হলেন—শিমুলের স্ত্রী সাবিনা মুক্তা, বড় ভাই লাকি ভুঁইয়া ও ভাতিজা তানভীর ভুঁইয়া। ১৯৮৫ সালে স্থানীয় ডুমুরিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান ইমরানকে হত্যার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন শিমুল ভুঁইয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, শিমুল একাই এ পর্যন্ত শতাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :