বরিশাল প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসকদের সেবা না পেয়ে মারা যাওয়া কলেজ ছাত্রের মামাসহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হলে রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় তাদের দু’জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রবিবার (১২ জুন) বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন জানান, শনিবার রাতে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে গ্রেফতার দু’জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় দায়েরকৃত এজাহারে চিকিৎসকদের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় কলেজ ছাত্রের মামা আনোয়ার হোসেন ও শাওনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রবিবার সকালে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া কলেজ ছাত্রের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে গ্রেফতার হওয়া শাওনের মা শাহনাজ পারভীন বলেন, ইন্টার্নরা মৃত রিয়াদের স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের হকিস্টিকসহ লাঠি দিয়ে মারধর করেছে। আবার উল্টো তারাই মামলা দিয়েছে। আমরা ইন্টার্নদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করবো না। আমার নির্দোষ সন্তানের মুক্তি চাই।
শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাকিন আহমেদ খান বলেন, শনিবার দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক কলেজ ছাত্রের স্বজনরা আমাদের উপর হামলা করেছে এবং হুমকি দিয়েছে। এতে আমরা আতঙ্কিত। সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ আমাদের আশ্বাস দিয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতে।
প্রসঙ্গত, দুই বন্ধু হৃদয় ও ওসমান গনিকে নিয়ে শনিবার দুপুরে মোটরসাইকেলে ইসলামিয়া কলেজ থেকে তালতলী যাচ্ছিলো রিয়াদ। দুপুর ১টার দিকে মহাবাজ এলাকায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। গুরুতর আহত তিন বন্ধুকে ভর্তি করা হয় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রিয়াদের।
রোগীর স্বজনদের দাবি, আহতদের হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা একজন একজন করে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। রিয়াদের অবস্থা বেশি খারাপ জানানোর পরও চিকিৎসকরা শোনেন নি। চিকিৎসার অভাবে রিয়াদের মৃত্যু হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলেছেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে ঐ রোগীকে বাঁচানোর জন্য। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলা হয়। রাত সোয়া ৮টায় এই ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের সব গেট আটকে বিক্ষোভ করে ইন্টার্নরা এবং বিনা চিকিৎসায় কলেজ ছাত্র রিয়াদের মৃত্যুর কারণে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে শনিবার রাত সোয়া ১০টা থেকে বিক্ষোভ করে রিয়াদের স্বজন ও সহপাঠীরা। পরে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করে।