atv sangbad

Blog Post

atv sangbad > অপরাধ-অনুসন্ধান > সীমাহীন দুর্নীতিতে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান!

সীমাহীন দুর্নীতিতে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান!

অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ 

সংবাদের শিরোনামে হতবাক হবেন অনেকেই! জরিপে শিক্ষাখাতে যে দেশে সর্বোচ্চ দুর্নীতি পাওয়া যায়, সেখানে এই সংবাদ শিরোনাম দেখে হতবাক হবার কিছুই নেই। এটিভি সংবাদের আজকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে রয়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামালের সীমাহীন দুর্নীতির সামান্য কিছু (পর্ব-১)!

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামালের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিজ পরিবারের সদস্যদের বোর্ডে নিয়োগ, বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তদের বাদ দিয়ে ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, শ্রেণী শাখা খোলার অনুমতির ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন উদযাপন ব্যয়ের সিংহভাগ নিজের পকেটে নেয়াসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এছাড়া চেয়ারম্যানের ভাইদের বিরুদ্ধেও বোর্ডের বিভিন্ন কাজে হস্তক্ষেপ এবং কর্মকর্তাদের হুমকি-ধামকি দেয়ার বিস্তর অভিযোগ আছে। চেয়ারম্যানের এক ভাইয়ের আবদার না শোনায় বোর্ডের এক কর্মকর্তার বাসায় গিয়ে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এসব নিয়ে ময়মনসিংহ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান ড. গাজী হাসান কামাল। তিন বছর বোর্ড চেয়ারম্যান থাকার বিধান থাকলেও তিনি সাড়ে ৪ বছর ধরে বহাল তবিয়তে আছেন এ পদে। চেয়ারম্যান নিজে বলে বেড়ান, শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি তাকে এ পদে বহাল রেখেছেন। অথচ বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, বিভিন্নভাবে ঊর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করেই তিনি এ পদে আছেন। উত্থাপিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামাল। তিনি বলেছেন, কয়েকজন কর্মকর্তা দুর্নীতির চেষ্টা চালিয়েছেন এবং এরজন্য তাদের নিবৃত্ত করায় তারা ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়াচ্ছেন।

বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তার অভিযোগ, চেয়ারম্যান হওয়ার পর নিজের পরিবারের কয়েকজনকে বোর্ডে নিয়োগ দিয়েছেন ড. গাজী হাসান কামাল। তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর বড় ভাই গাজী হাসান ফারুকের ছেলে রুবায়েত হাসান ও আরেক ভাই গাজী হাসান শহীদের স্ত্রী দোলনা আক্তারকে বোর্ডের অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দিয়েছেন।

চেয়ারম্যানের তিন ভাই গাজী হাসান ফারুক, গাজী হাসান শহীদ ও গাজী হাসান বাবু  প্রতিদিন বোর্ডের বিভিন্ন কাজের তদবির করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ আবদার না রাখলে চেয়ারম্যানের ভাই গাজী হাসান শহীদ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বোর্ডের কর্মকর্তাদের প্রায়ই ফোন করে গালাগালি করেন। বোর্ডের কাজে দালালি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে মারামারি পর্যন্ত হয়েছে। এ নিয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানায় জিডিও হয়েছে। চেয়ারম্যানের ছোট ভাই গাজী হাসান বাবু নিজের চাহিদামতো কাজ না হওয়ায় বোর্ডের কর্মকর্তাদের বাসায়ও হামলা চালিয়েছেন বলে জানান অনেক কর্মকর্তারা।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, বিভিন্ন উদযাপন কমিটির অর্থ বরাদ্দ থেকে সিংহভাগ অর্থ নিজে নিয়ে নেন। কেউ প্রতিবাদ করলে ভয়ভীতি দেখান এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বোর্ডের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন এই দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান। এ কারণেই বোর্ডের দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসে না। এভাবে বিভিন্ন মহলকে উৎকোচ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ বছর যাবৎ চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল তবিয়তে আছেন। গানম্যান সাইফুল ইসলামের সাথে চেয়ারম্যানের  যোগাযোগ আছে বলে জানা যায়। গানম্যান সাইফুলের আপন দুই ভাতিজা শাহীন ও তারেককে বোর্ডে চাকরি দিয়েছেন তিনি।

বোর্ডের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, চেয়ারম্যানের দুর্নীতির আরেক ক্ষেত্র হচ্ছে বোর্ডের কলেজ পরিদর্শন ও বিদ্যালয় পরিদর্শন বিভাগ। বোর্ডের আওতাধীন কলেজ ও বিদ্যালয়গুলোতে প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, শ্রেণী শাখা খোলা ইত্যাদি কাজের জন্য পরিদর্শন করার প্রয়োজন পড়ে, কলেজ ও বিদ্যালয় শাখার পরিদর্শন কর্মকর্তাদের কাজ। কলেজ-বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গেলে কর্মকর্তাদের সম্মানার্থে কিছু সম্মানী দেওয়ার অবৈধ রেওয়াজ আছে। কিন্তু বোর্ডের চেয়ারম্যান বোর্ডের সিংহভাগ পরিদর্শন তিনি নিজে অথবা তার অনুগত বোর্ডের পরীক্ষা শাখার কর্মকর্তা সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সাখাওয়াত হোসেনকে দিয়ে করিয়ে থাকেন।

এ সংক্রান্ত সব আবেদন বিদ্যালয় শাখা ও কলেজ শাখায় জমা নেয়ার প্রচলন থাকলেও তা না করে সব আবেদন চেয়ারম্যানের পিএ ফয়সল হোসেন গ্রহণ করেন। পরে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে যোগাযোগ করে পরিদর্শন কাজ সম্পন্ন করে থাকে। এ কাজে কলেজ পরিদর্শক ও বিদ্যালয় পরিদর্শককে প্রায় অন্ধকারেই রাখে বলা যায়। সাখাওয়াত হোসেন পরীক্ষা শাখার সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হলেও তাকে বিদ্যালয় শাখায় সংযুক্ত করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ বলেছেন, ‘ঘন ঘন পরিদর্শন, যত পরিদর্শন তত টাকা! এ বিষয়টাকে বেহুদা পরিদর্শন বলা হয়েছে।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামালের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত নানা অভিযোগের বিষয়ে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে এবং তাৎক্ষণিক মুঠোফোন বন্ধ করে দেন। একাধিকবার তাঁর ব্যবহৃত দু’টো নাম্বারে ফোন করা হয়েছে, রিং বেজেছে অথচ ফোন ধরেননি তিনি।

বিষয়টির উপর অনুসন্ধান চালায় এটিভি সংবাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক। একজন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এতোটা দুর্নীতি ও অনিয়ম করে (মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও) কি করে বহাল থাকে ওই পদে? কিসের ক্ষমতা বলে বলিয়ান ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামাল?

বাংলাদেশের কোন শিক্ষা বোর্ডে নেই এ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম। যেখানে স্বয়ং শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত, সেখানে এখনো নেই কেনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত?

আসছে আগামীতে আরো লোমহর্ষক তথ্য নিয়ে বিস্তারিত (পর্ব-২) 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ব্রেকিং নিউজ :