ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো পড়ে আছে সনাতন ব্যবস্থায়। এখানে ভর্তির টাকা অনলাইনে দেওয়া গেলেও বিভাগ/ইনস্টিটিউট ও হলের টাকা জমা দিতে হয় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে সনাতনি পদ্ধতিতে। এতে অন্তত দুই থেকে তিন দিন অনেক কষ্ট ও ভোগান্তি নিয়ে কাজটি শেষ করতে হয়েছে নবীন শিক্ষার্থীদের।
জুনের প্রথম সপ্তাহে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত শেষ হয় এই ধাপগুলো। এরপর বাকি প্রক্রিয়া সশরীরে করতে হয় শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার ও রবিবার দেখা যায়, এই ফি জমা দিতে এসে শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাংকের কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। প্রশাসনিক ভবনে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। প্রশাসনিক ভবনের ভেতর থেকে শুরু হয়ে শিক্ষার্থীদের লাইন চলে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কখনো বা উপাচার্যের বাসভবন পর্যন্ত।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাইমুম আক্তার দিনা বলেন, ‘টানা দুই দিন প্রচণ্ড দৌড়াদৌড়ি করে ঢাবির ভর্তি সম্পন্ন করেছি। বিভাগ থেকে প্রথমে ফরম দিয়ে ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়? এত লম্বা লাইন, সঙ্গে কী পরিমাণ যে বিশৃঙ্খলা! দীর্ঘ দেড়/দুই ঘণ্টা পর এক প্রকার যুদ্ধ করেই ব্যাংক থেকে বের হলাম। এরপর ফের বিভাগে যেতে বলা হলো। সেখান থেকে পে-ইন স্লিপটা নিয়ে আবার হলে। হলের লাইনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, ঢাবিতে চান্স পাওয়ার চেয়ে ভর্তি হওয়াটাই কষ্টকর বেশি। এক লাইনে দাঁড়িয়ে পে-ইন স্লিপে সাইন করে সেটা ওখানে রেখে দেওয়া হলো। ফের আরো দীর্ঘ একটা লাইনে দাঁড়িয়ে নাম-ঠিকানা লিখতে হলো। প্রায় তিন ঘণ্টা পর হল থেকে বেরিয়ে যেতে হলো জনতা ব্যাংকে। একগাদা চেক লিখে লাইনে দাঁড়িয়ে জমা দিতে হলো টাকা। এতেই শেষ না। বলা হলো পরের দিন যাতে হলে যাই। সেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ফের পে-ইন স্লিপটা নিতে হলো। এরপর আবার বিভাগে গিয়ে অবশেষে ঢাবির ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো।’
জানতে চাইলে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের উম্মে হাবিবা বলেন, ‘ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার অভিজ্ঞতা বলতে গেলে খুব একটা ভালো ছিল না। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। সব থেকে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে। সারা দিন লেগে গেছে শুধু ব্যাংকে টাকা জমা দিতে। অনেকে তাও পারেনি। আর ওখানে অনেক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল, অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়েছিল। এমনকি হলেও একই অবস্থা ছিল। টানা তিন দিন অনেক কষ্টের পর ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পেরেছি। সারা দিনে কোনো কিছু খাওয়ার সময় পর্যন্ত হয়নি। সেই সকাল ৬টায় বাসা থেকে বের হয়ে রাতে ফিরতে হয়েছে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তির বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এই প্রক্রিয়া অনলাইনে করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের কোনো ফি সশরীরে এসে এ রকম লাইন ধরে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দিতে হবে না।’