অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ //
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা জুড়ে যখন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতা ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে, তখন রাজাপালং ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম প্রকাশ্যে দাপট দেখিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে উঠেছে গ্যাংবাজি ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির গুরুতর অভিযোগও।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সরেজমিন রাজাপালং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, টাইপালং এলাকার ভ্যানচালক কালুর ছেলে সাইফুল ইসলাম শ্রমিকলীগের পদ পাওয়ার পর থেকেই এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তার চারপাশে গড়ে উঠেছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র, যারা তার নির্দেশে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায়, হুমকি এবং ভয় দেখানোর কাজ করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম রাজাপালং বাজার থেকে শুরু করে টাইপালং পর্যন্ত বেশ কিছু এলাকায় চাঁদা আদায়ের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, সাইফুল ইসলামের আশপাশে না থাকলে এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে সামাজিকভাবে হেনস্তা করা হয়, এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করা হয়। স্থানীয় এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এলাকায় এখন তার কথাই শেষ কথা। কারো সাহস নেই তার বিরোধিতা করার।
অভিযোগ রয়েছে, সাইফুল ইসলাম সম্প্রতি কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও কুতুপালং বাজার এলাকায় রহস্যজনকভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয়দের আশঙ্কা, তিনি কোনো রোহিঙ্গা সিন্ডিকেট বা দেশবিরোধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন কিনা, তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এক তরুণ বলেন, প্রায়ই দেখা যায় সে ক্যাম্প এলাকায় কিছু লোক নিয়ে অবস্থান করে। কী উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়ায়—এটা তদন্ত করা দরকার।
রাজাপালং ইউনিয়নের কয়েকজন প্রবীণ নাগরিক বলেন, ৫ আগস্টের পর উখিয়ায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আত্মগোপনে থাকলেও শ্রমিকলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন—এটা অস্বাভাবিক এবং প্রশাসনের ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়। তাদের দাবি, সাইফুল ইসলাম হয়তো কোনো প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো গরিবের ছেলে না। আমার বাবার অনেক সম্পদ আছে। আমি এলাকার মানুষের পাশে আছি। কেউ রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে।
তবে স্থানীয়দের দাবি, এই বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাদের ভাষায়, যখন বড় বড় আ.লীগ নেতারাও আত্মগোপনে, তখন একজন শ্রমিকলীগ নেতার প্রকাশ্য দাপট শুধু উদ্বেগজনক নয়, প্রশাসনের নীরবতারও প্রমাণ করে।
এ বিষয়ে উখিয়া থানার চৌকস অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল হক এটিভি সংবাদকে মুঠোফোনে বলেন, এই বিষয়ে এখনো থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উখিয়ার সচেতন মহলের মতে, স্থানীয় রাজনীতিতে সাইফুল ইসলামের উত্থান এখন এক ধরনের অপরাধী শক্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা না নেয়, তবে রাজাপালং ও আশপাশের এলাকায় নতুন করে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে। প্রশাসনের দায়িত্ব এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া—যাতে রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে চলে না যায়।
উল্লেখিত বিষয়টির উপর সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে স্থানীয় প্রশাসন, তা না হলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা হারাবে সর্বস্তরের জনগণ!
এটিভি/উখিয়া/শ্রমিক লীগের দাপট/এম