অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পুত্র নবীনূর দেওয়ানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩৮৫/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ ধারায় হরিরামপুর থানায় মামলা হয়েছে। মামলার পরও বন্ধ হচ্ছেনা চাঁদাবাজি। তবে পুলিশ বলছেন, তদন্ত করে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় গতকাল শনিবার (১৭ জুন) রাতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাল্কহেড মালিক ও বালু ব্যবসায়ী রাজু আহম্মেদ বাদি হয়ে হরিরামপুর থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন।
আসামীরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান পুত্র নবীনূর দেওয়ান (২৭) ও একই উপজেলার বহলাতলীর জিন্নাল দেওয়ানের ছেলে তারেক দেওয়ান (৪৩), আকতার হোসেনের ছেলে আবজাল হোসেন (৪৭), গোপীনাথপুরের শহিদ মাতবরের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৩), কইলা মিয়ার ছেলে নাসির মিয়া (২২), দাসকান্দির বয়ড়ার মৃত দেওয়ান শামসুর রহমানের ছেলে টিপু দেওয়ান (৪৫) মোশাররফ পোদ্দারের ছেলে মামুন পোদ্দার (২৭) এবং কালই এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে মোহাম্মদ এরশাদসহ (৫০) অজ্ঞাত প্রায় ১৫জন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ইজারাকৃত বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডের মাধ্যমে নদীপথে ফ্লাইওভার, মেট্টোরেল, বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বালু দিয়ে আসছেন রাজু আহম্মেদ। কিন্তু সম্প্রতি হরিরামপুরের বয়ড়া ইউনিয়নের আন্ধারমানিক খেয়াঘাটের পদ্মা নদীতে কয়েকটি বালুবাহী বাল্কহেড আটক করে বাল্কহেডের কর্মচারীদের মারধর করে ও প্রতিটি বাল্কহেড থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসামীরা এবং চাঁদা না দিলে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়ারও হুমকি দেয়। সেই সঙ্গে চাঁদা না দিলে হরিরামপুর থেকে আসামীদের বালু নিয়ে বিক্রি করতে হবে। আসামীদের ভয়ে কয়েকদিন বাল্কহেড বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়েছে এবং এই নৌপথে বাল্কহেডের কর্মচারীরা আসতে ভয় পাচ্ছে। পরে বিষয়টি বাল্কহেড মালিক ও গণ্যমান্যদের সাথে আলোচনা করে শনিবার রাতে হরিরামপুর থানায় মামলা করা হয়।
বাল্কহেড মালিক ও বালু ব্যবসায়ী রাজু আহম্মেদ জানান, হঠাৎ করে হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান পুত্র নবীনূর দেওয়ানের নেতৃত্বে একদল ব্যক্তি নদীতে বাল্কহেড আটক করে চাঁদা দাবি করছে। সারাদেশে ৫’শ বাল্কহেড চলাচল করে। এর মধ্যে হরিরামপুরে পদ্মা দিয়ে প্রতিদিন ৫-৭টি বাল্কহেড চলাচল করে আর এসব বাল্কহেড থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার করে টাকা চাঁদা দাবি করছে। দেশের কোথাও তো চাঁদা দিতে হয় না, অথচ হরিরামপুরে চাঁদার জন্য বাল্কহেড আটক করে রাখছে চাঁদাবাজরা। অভিযোগের পরও বাল্কহেড আটক করে চাঁদা দাবি করছে বলেও তিনি জানান।
অভিযুক্ত নবীনূর দেওয়ান মিডিয়াকে জানায়, এটা আমার বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা ষড়যন্ত্র। এলাকায় আমাদের সম্মানহানীর জন্য এ ধরনের কাজ করা হয়েছে। তবে বালুর ব্যবসা সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন নবীনূর।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে বহুবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি তাঁকে। জানা যায় তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বিষয়টি বড়ই নেক্কারজনক বলে মন্তব্য করেন, এটিভি সংবাদ ডটকম’র সম্পাদক এস এম জামান। তিনি বলেন, বর্তমান দেশের সফল সরকার তথা সফল পুলিশ বাহিনী দেশ ও জাতির স্বার্থে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। যেখানে নিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে আইন কোন প্রকার অন্যায়কে ছাড় দেওয়া হচ্ছেনা, সেখানে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজরাও কোন প্রকার ছাড় পাবেন না বলেও মন্তব্য সম্পাদকের।
উল্লেখিত বিষয়ে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার আদিত্য বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।