আহসান হাবীব, এটিভি সংবাদ
নিজের শেষ সম্বলটুকু রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করেও আগুনের তাপে কিছুই করতে পারলেন না। শুধু দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন ব্যবসায়ী মাসুদ। দাঁড়িয়ে চোখেই দেখে গেছেন নিজের সম্বলটুকু পুড়তে। তাদেরই একজন মো. মাসুদ। ক্ষতিগ্রস্ত এই ব্যবসায়ী বলেন, সেহরি খেয়ে ঘুমাইছিলাম, পৌনে ৭টার দিকের আগুনের খবর পাই। দ্রুত এসেছি, কিন্তু কিছুই বের করতে পারি নাই। আমার দোকানে সব শিশুদের কাপড়। প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব পুড়ে ছাই, কিছুই বের করতে পারিনি।
অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া আরেক ব্যবসায়ী সবুজ। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দোকানে তুলেছেন ২০ লাখ টাকার কাপড়। ছিল আগের কালেকশানও। সব মিলে ৫০ লাখ টাকার বিনিয়োগ ছিল দোকানকে ঘিরে। ছিল অনেক স্বপ্নও, কিন্তু ভোর বেলার অগ্নিকাণ্ড পথে বসিয়েছে তাকে। তিনি বলেন, ‘মুহূর্তেই সব পুড়ে গেছে। কিছুই বের করতে পারি নাই। আমার প্রায় ৫০ লাখ টাকার কাপড় পুড়ে গেছে।
আর মাত্র ক’দিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিম জাতির সব থেকে বড় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে লোকসান কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছিলেন ব্যবসায়ীরা। মুনাফা লাভের আশায় দোকানে মজুত করেছিলেন বিভিন্ন মালামাল। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নে হানা দিলো ভোরের আগুন। নিমিষেই ছাইয়ে পরিণত হলো দোকানিদের স্বপ্ন। বলছি- রাজধানীর বঙ্গবাজারে লাগা মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোরের আগুনের কথা।
এদিন ভোর ৬টার দিকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে বঙ্গমার্কেটে। এরপর একে একে জ্বলতে থাকে আশপাশের আরও চারটি ভবন। বঙ্গবাজার মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, বঙ্গ ১০ কোটি মার্কেট ও আদর্শ মার্কেটের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে এনেক্সকো টাওয়ারেও।
এ সময় চোখে মুখে হতাশার ছাপ দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকে। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হতে দেখে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছেন আগুনের দিকে।
অগ্নিকাণ্ড কবলিত মার্কেটে শাড়ি দোকান ছিল আবুল হোসেনের। সকাল ৯টার দিকে তার সঙ্গে কথা হয় মিডিয়া কর্মীদের সাথে। কান্নায় ভেঙে পড়া আবুল হোসেন বলেন, আমার দোকানে দেড় কোটি টাকার মাল ছিল। কিছুই বের করতে পারি নাই, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
দাউ দাউ করে জ্বলছিল তিলে তিলে গড়ে তোলা দোকান। আর দূর থেকে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্যই দেখছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী রাসেল। বিলাপ আর আহজারি করতে করতে বলছিলেন, তসব শ্যাস হইয়া গেছে! গতকালকেই দোকানে মাল ঢুকাইছিলাম, আইজকা ৪টা দোকান পুড়ে আমি এখন রাস্তায় বইসা গেছি। ২ কোটি টাকার মালামাল সব পুইড়া গেছে।
সিরাজুল ইসলাম নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমার দোকানে ২০ লাখ টাকার পোশাক ছিল। আমি প্রায় অর্ধেক পণ্য বের করতে পেরেছি, কিন্তু সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। পানির কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।