সৈকত মনি, এটিভি সংবাদ
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অ্যাম্বুল্যান্সের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার নিহত ৭ জনের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় ফ্লাইওভারের ওপর এ দুর্ঘটনাস্থলেই তারা মারা যায়। তবে অ্যাম্বুল্যান্স চালক মিতুল মালোকে (২৪) মারাত্মক আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মারা যান। এ ঘটনায় গাড়িতে থাকা ৭ জন ও চালকসহ ৮ জনই মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে শনাক্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।নিহতদের ব্যাগে থাকা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জেলা প্রশাসন জানতে পারেন নিহতদের বাড়ি বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর গ্রামে। ডিসি-এসপি বোয়ালমারীর ইউএনও এবং ওসিকে বিষয়টি জানান। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের সহায়তায় নিহত তাসলিমা বেগমের বাড়িতে দুপুর ৩টার দিকে এ খবর পৌঁছালে স্বজনদের কান্নায় ভারী হতে থাকে ফেলাননগর গ্রাম।
শনিবার দিবাগত রাত ৯টায় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে নিহত তাসলিমা বেগমের মরদেহ ফেলাননগর, তার বড় মেয়ে শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমড়া গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী কমলা পারভীন (৩২), কমলা পারভীনের বড় ছেলে আরিফ (১৩), মেঝ ছেলে হাসিব (৮) ও কন্যা আফসার (২) লাশ রাত ১০টায় মাইটকুমরা গ্রামে এবং তাসলিমার মেঝ মেয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের কুচিয়াগ্রামের সেনা সদস্য মাহামুদুল হাসান রনির স্ত্রী মোসা. বিউটি পারভীন (২৭), বিউটি পারভীনের ছেলে মেহেদীর (১০) মরদেহ নিজ বাড়ি কুচিয়াগ্রামে পৌঁছায়।
নিহতদের লাশ ফেলাননগর-রেনিনগর কবরস্থান, মাইটকুমরা পারিবারিক কবরস্থান এবং আলফাডাঙ্গা উপজেলার কুচিয়াগ্রামে রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেককে জেলা প্রশাসন ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। নিহতদের লাশ স্ব স্ব এলাকায় দাফনের বিষয়টি বোয়ালমারীর ইউএনও মোশারেফ হোসাইন ও ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন, বোয়ালমারী উপজেলার ফেলাননগর গ্রামের সৌদি প্রবাসী আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫০), তার বড় মেয়ে কমলা পারভীন (৩২), কমলা পারভীনের বড় ছেলে আরিফ (১৩), মেঝ ছেলে হাসিব (৮), কন্যা হাফসা (২) এবং তাসলিমার মেঝ মেয়ে মোসা. বিউটি পারভীন (২৭), বিউটি পারভীনের ছেলে মেহেদী (১০) ও গাড়ি চালক ফরিদপুর শহরের মিতুল মালো (২৮)।
নিহত তাসলিমার মেঝ ভাসুর নুরু শেখ কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী দেড় মাস আগে ঢাকায় মেয়ের বাসায় থেকে চিকিৎসা শেষে ঈদকে সামনে রেখে দুই মেয়ের পরিবারসহ বাড়ি ফিরছিলেন। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি পথিমধ্যে ভাঙ্গা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সকলেই নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাতে এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার মাধ্যমে জানতে পারি নিহতরা সকলেই বোয়ালমারীর ফেলাননগর গ্রামের বাসিন্দা। বিকেলেই পুলিশসহ নিহতদের পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে ফরিদপুর হাসপাতালে মরদেহ শনাক্ত করা হয়। পুলিশ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিহতদের মরদেহ স্ব স্ব এলাকায় পৌঁছালে রাতেই লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়।
নিহতদের বাড়িতে স্বজনদের সমবেদনা জানাতে যাওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় নিহতদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এটিভি/জেড