টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, এটিভি সংবাদ //
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন নির্মাণের এক দশক পরও ব্যবহার হয়নি। কমিটি না থাকা ও আইনি জটিলতায় ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রাণকেন্দ্র বাসস্ট্যান্ড চত্বরে অবস্থিত ভবনটি অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে ধীরে ধীরে হারাচ্ছে যৌলুস। দেয়ালের রং খসে পড়েছে, জায়গায় জায়গায় আগাছা গজিয়েছে। ভেতরের সোলার সিস্টেম ও অন্যান্য সরঞ্জাম অচল হয়ে পড়েছে। প্রধান ফটকের সামনে গড়ে উঠেছে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড; এতে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নির্মিত এসএস পাইপের বেষ্টনীও নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেসার্স লাকি এন্টারপ্রাইজ প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০১৬ সালের মে মাসে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাছে এটি হস্তান্তর করা হলেও কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। মুক্তিযোদ্ধারা এখনও পুরাতন ভবনেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের পর কেন ব্যবহার করা হচ্ছে না জানতে চেয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মজিদ মিয়াকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সূত্র জানায়, এ ভবনটি ঘিরে রয়েছে আইনি জটিলতা। সড়ক ও জনপথের জায়গায় অনুমতি না নিয়ে ভবন নির্মাণ করায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডারসহ একাধিক ব্যক্তির নামে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে জানাযায়, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের সহযোগিতায় ভবনের কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে বিষয়ে একটি রেজুলেশন করা হয়। রেজুলেশনে ভেতরে থাকা দোকান ভাড়া দেয়ার প্রস্তাব ও প্রতিটি দোকানের জন্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জামানত এবং ২ হাজার পাচশত টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার পাঁচশত টাকা ভাড়া নির্ধারন করা হয়। উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেয়া হয় দরপত্র আহ্বান করার জন্য। কিন্তু নির্দিষ্ট একটি পরিপত্র অনুযায়ী আহবায়ক কমিটির অভাবে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় ফের থেমে থাকে চলমান প্রক্রিয়া। নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ আসার পর এই বিষয়ে তেমনটা আগ্রহ দেখাননি। এরপর ৫ই আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর মুক্তিযোদ্ধারা আর সেই পরিপত্র অনুযায়ী কমিটি গঠন করতে পারেনি। নির্বাচিত কমান্ডাররা নিয়মিত তাদের মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আসেন না। সর্বশেষ সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান ফের উদ্যোগ গ্রহণ করেন চলতি বছরের ১০ আগস্টে। কিন্তু পরিপত্র অনুযায়ী এখনো হয়নি সেই কাঙ্খিত কমিটি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, আমরা ভবনটি চালুর চেষ্টা করছি। আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, এবারও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাজিব হোসেন বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এ বিষয়ে অবগত নই। শিগগির নতুন ইউএনও আসবেন, তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এটিভি/ভুয়াপুর/মুক্তিযোদ্ধা ভবন অবহেলায়/এম