অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, এটিভি সংবাদ
শ্রমিক নিয়োগের চাহিদাপত্র দেখিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে ৭০ জনের কাছ থেকে সাভার ডেইরি ফার্ম ওয়ার্কম্যান ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওয়ার্কম্যান ইউনিয়নের সভাপতি আসাদুর রহমান, সহ-সভাপতি আরিফ হোসেন ও সম্পাদক মাসুদ মুন্সীর বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।
সূত্র জানায়, নিয়োগ অবসান ও মৃত্যুর কারণে সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন কমছে। খামার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর ১২৭ জন শ্রমিক নিয়োগের চাহিদাপত্র দেন খামারের পরিচালক। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুগ্ধ খামারের এক কর্মকর্তা জানান, অল্প সময়ের মধ্যে নিয়োগের বিষয়টি চাউর হয়। এ সুযোগে একটি চক্র সহজ-সরল শ্রমিকদের মাঝে নিয়োগের প্রচারণা শুরু করে। চাকরি দেওয়ার নামে ৭০ জনের কাছ থেকে চক্রটি দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ চক্রের সঙ্গে ওয়ার্কম্যান ইউনিয়নের নেতা ও দুগ্ধ খামারের কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে।
খামারের মাস্টার রোলের শ্রমিক তারা মিয়ার স্ত্রী বলেন, ‘ট্যাহা দিয়াও আমাগো চাকরি দেয় না, যারা মুটা টাকা দেয়, তাগো চাকরি অয়। গত কুরবানি ঈদের আগে আমাগো এলাকার আরিফ কইল, চাচি ট্যাহা দ্যাও-তুমার পুলারে ডেইরি ফার্মে মাস্টার রোলে চাকরি দিয়া দিমু। বিশ্বাস কইরা দুই লাখ ট্যাহা দিছি আরিফরে। আমার জমানো এক লাখ আর ছেলার শ্বশুর বাড়ি থেকে আনছি এক লাখ। বাজান-বিশ্বাস কইরা আমি গত কোরবানির আগে তারে ট্যাহাডা দিছি। আর এক কুরবানি ফিরা আইল এহনও পুলারে চাকরি দেয় নাই আরিফ। ট্যাহাও ফিরাইয়া দেয় না।’ সাভার ডেইরি ফার্ম ওয়ার্কম্যান ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আরিফ হোসেন বলেন, চাকরি দেওয়ার জন্য কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেইনি। দিনমজুর তারা মিয়া বিএনপির লোক, তাই আমার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে।
মাস্টার রোলে কর্মরত গোলাম মোস্তফা বলেন, এখানে প্রায় ৪০ বছর ধরে চাকরি করছি। আমার অবসরের সময় এসেছে। ভেবেছিলাম ছেলের চাকরির ব্যবস্থা করব। এজন্য ওয়ার্কম্যান ইউনিয়নের সভাপতি আসাদুর রহমান ও সম্পাদক মাসুদ মুন্সীকে অনুরোধ করি। তারা আমার অনুরোধ এড়িয়ে যান। কারণ বাইরের লোককে নিয়োগ দিলে ছয় লাখ টাকা পাওয়া যায়। আমি তো এত টাকা দিতে পারব না, তাই আমার ছেলের চাকরি হয়নি।
মোস্তফা আরও বলেন, এবার ৭০ জনের কাছ থেকে তারা প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডেইরি ফার্মের পাশের কলমা ও আমবাগান এলাকার শাহিন, মঞ্জু, সাইফুল, ইকবাল, আকরামসহ ২০ জন ভুক্তভোগী জানায়, মাস্টার রোলে নিয়োগের চাহিদাপত্র দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে তিন লাখ করে টাকা নিয়েছেন ওয়ার্কম্যান ইউনিয়নের সভাপতি আসাদুর রহমান, সম্পাদক মাসুদ মুন্সি ও তাদের প্রতিনিধিরা। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও নিয়োগ দিতে না পারায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ডেইরি ফার্মের ওয়ার্কম্যান ইউনিয়নের সামনে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীরা জড়ো হয়। একপর্যায় টাকা আত্মসাৎকারীদের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। সাংবাদিক হুমায়ুন কবির ওই দৃশ্য ধারণ করতে গেলে ওয়ার্কম্যান ইউনিয়নের ক্যাডারদের হামলার শিকার হন।
সাভার গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক ডা. মো. মনিরুল ইসলাম মিডিয়াকে বলেন, ডেইরি ফার্মের কর্মকর্তা ও ওয়ার্কম্যান ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওয়ার্কম্যান ইউনিয়নের সভাপতি আসাদুর রহমান ও সম্পাদক মাসুদ মুন্সি মামলার কারণে পলাতক থাকায় তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।